দুর্জয় দাশ [তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগ,ইউএসটিসি]
বিশ্ববিদ্যালয় ছড়িয়ে থাকলেও, চাকরির পরীক্ষা কেন্দ্রীভূত শুধু ঢাকায়।
বাংলাদেশের চুয়েট, কুয়েট, রুয়েট, বুয়েটসহ সরকারি ও বেসরকারি শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীকে ঢাকায় গিয়ে দিতে হয় চাকরির পরীক্ষা।
প্রতিবছর প্রায় ৩০,০০০-এর বেশি ইঞ্জিনিয়ার গ্র্যাজুয়েট হন (সূত্র: ইউজিসি), কিন্তু সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরির প্রায় ৯৫% পরীক্ষা শুধুমাত্র ঢাকায় আয়োজন করা হয়।
এর ফলে একজন শিক্ষার্থীকে প্রতিবার পরীক্ষার জন্য ঢাকা যেতে হয়, যা সময়, অর্থ ও শারীরিক কষ্টের দিক থেকে অনেক বড় চাপ।
প্রতিটি চাকরির পরীক্ষায় নতুন করে খরচ—যেন ভিন্ন এক যুদ্ধের শুরু
ফর্ম ফি: ২০০–১,০০০ টাকা
যাতায়াত: ৫০০–২,০০০ টাকা
থাকা–খাওয়া: ১,০০০+ টাকা
একটি চাকরির পরীক্ষায় গড়ে ২,০০০–৩,০০০ টাকা খরচ হয়। বছরে যদি কেউ ৫–১০টি পরীক্ষায় অংশ নেয়, তাহলে মোট খরচ দাঁড়ায় ১৫,০০০–২৫,০০০ টাকা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (২০২৩) মতে, দেশের ৪৭% বেকার তরুণ কোনো আয়ের উৎস ছাড়াই বেঁচে থাকে। ফলে এই ব্যয় এক নিঃশ্বাসে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না অনেকের।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বন্যা, কিন্তু সমন্বয়ের অভাব প্রকট
২০২৩ সালে সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ২,০০০-এর বেশি চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
এর মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং-সম্পর্কিত ছিল প্রায় ৩০০টি।
প্রতিটি বিজ্ঞপ্তি:
আলাদা ফি
আলাদা আবেদনপদ্ধতি
আলাদা পরীক্ষা তারিখ
ফলে একজন চাকরিপ্রত্যাশীকে বারবার প্রস্তুতি নিতে হয়, বারবার ঢাকা যেতে হয়। এতে মানসিক চাপ বাড়ে এবং অনেকেই দৌড় থেকে ছিটকে পড়ে।
গুচ্ছ ভর্তি যখন সম্ভব, চাকরির গুচ্ছ পরীক্ষা কেন নয়?
দেশে গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফলে শিক্ষার্থীরা সময় ও অর্থ সাশ্রয় করেছে।
তাহলে একাধিক সরকারি দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ পরীক্ষাও কি একক গুচ্ছ পদ্ধতিতে নেওয়া সম্ভব নয়?
একটি একীভূত গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হলে—
গুচ্ছ ভিত্তিক ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ পরীক্ষা চালু করা
আঞ্চলিক পরীক্ষাকেন্দ্র চালু করা (চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, সিলেট) পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
স্বপ্নগুলো যেন স্টেশনে না থামে।
চাকরি পাওয়া হোক কঠিন—প্রস্তুতির দিক থেকে,
কিন্তু সুযোগ হোক সমান সবার জন্য।
আজ দেশের প্রতিটি প্রকৌশলী যেন লড়তে পারে নিজের মেধা ও দক্ষতা দিয়ে।